পাতলা হওয়ার অর্থনীতি

WhatsApp Image 2024-09-19 at 12.36.18
মাহীন হক
আলস্যের উকিল


মিরেই গুইলিয়ানো পাতলা গড়নের সফল এক নারী। তার জন্ম ফ্রান্সে আর জাতিসঙ্ঘের হয়ে দোভাষী হিসেবে কাজ করার আগে তিনি প্যারিস থেকে পড়াশুনা শেষ করেন। তারপর কিছুদিন তিনি শ্যাম্পেনের ব্যবসায় ছিলেন। ১৯৮৪ সালে যোগদান করেন ভ্যুভ ক্লিকো’তে, যার কাজকর্ম সেসময় মোটেই খুব একটা আকর্ষণীয় ছিল না। কিন্তু তার সাহায্যে কোম্পানিটা উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং একসময় আমেরিকায় একটা শাখাও খুলতে সক্ষম হয়। ১৯৯১ সালে তিনি এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর পদ গ্রহণ করেন ও ভীষণ সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। ডাউনটাউন ম্যানহ্যাটানের দিক মুখ করা অ্যাপার্টমেন্টে বসে তিনি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে ঠাট্টা করে বলেন, ‘জানেনই তো আমি পানি কতটা ভালোবাসি।’ ঠিকই। ‘ফরাসি কায়দায়’ ওজন কমানোর ও পাতলা থাকার ব্যাপারে তার বেস্টসেলিং ফ্রেঞ্চ উইমেন ডোন্ট গেট ফ্যাট বইটাতে প্রধান বিধান হলো প্রচুর পানি খাওয়া।      

বইতে তিনি কিশোরী বয়সের নিজের অস্বস্তির কথা লেখেন। সেসময় গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটাতে আমেরিকায় থাকাকালীন তার ওজন বেড়ে যায়। এই অস্বস্তি আরো বেড়ে যায় যখন আমেরিকা থেকে ফ্রান্সে ফেরার পর তার বাবা ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার বদলে, বলে ওঠেন তাকে দেখতে ‘একটা আলুর বস্তার মত লাগছে।’ এরপর তিনি নিজের খাদ্যাভ্যাস পুরোপুরি বদলে ফেলেন, নিজের পুরনো ফরাসি অভ্যাস আবার মনে করলেন (অনেক পানি, পরিমিত খাবার, নিয়মিত চলাচল) এবং সৌভাগ্যের কাটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন।       

সফল একজন নারী হিসেবে তিনি নিজের বাহ্যিক রূপ ও ওজন নিয়ে কথা বলেন। সে হিসেবে তিনি বেশ বিরল। তিনি বলেন, ‘কেউই এ বিষয়ে তেমন কথা বলতে চায় না। এর চেয়ে এই ভান করা অনেক সহজ যে এসব এমনি এমনিই হয়ে যায়।’ নারীবাদের একের পর এক তরঙ্গ স্মার্ট নারীদেরকে বলেছে যে তাদের উচিত এতদিনে আত্মগরিমা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করা—যেভাবে তারা গৃহকর্ম ও স্রেফ সন্তান উৎপাদন দ্বারা চিহ্নিত অস্তিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে এসেছে।       

কিন্তু নিজের শরীর ও ওজনের ব্যাপারে মন্তব্যের কারণে গভীরভাবে বিচলিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী হিসেবে তিনি একা নন। ওজন ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পডকাস্ট মেইন্টেনেন্স ফেজ এর সহ-উপস্থাপিকা অব্রে গর্ডনকে দশ বছর বয়সে এক ডাক্তার বলেছিল যে তার ওজন অতিরিক্ত বেশি। আমেরিকান লেখিকা  রোক্সেন গে বোর্ডিং স্কুল থেকে ফেরার পর আগের চেয়ে ৩০ পাউন্ড (প্রায় ১৪ কেজি) ওজন বেড়ে যাওয়ায় নিজের বাবা-মা’র হতবাক দশার কথা লিখেছিলেন।   

এই অভিজ্ঞতাগুলো গভীরভাবে ব্যক্তিগত, আবার একইসাথে ভীষণ সার্বজনীন, অন্তত উন্নত বিশ্বে। নারীদের উপর ‘আদর্শ’ এক রূপের যে ধারণা চাপিয়ে দেয়া হয় তারই প্রতিফলন ঘটে এতে। এই আদর্শ সময়ের সাথে বদলেছে অনেক। রেনেসাঁসের নগ্ন ছবিগুলোতে নারীর দেহে পর্যাপ্ত স্থূলতা ও ভাঁজ লক্ষ করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাতলা শরীরকেই আদর্শ বলে ধরে নেয়া হয়। টম উলফ-এর উপন্যাস বনফায়ার অফ দ্য ভ্যানিটিজ থেকে ধার করে ১৯৮০’র দশকে ‘সামাজিক এক্স-রে’ দিয়ে বোঝানো হতো সেইসব নারীদেরকে যারা এতটাই চিকন যেন তাদের গোটা অস্তিত্বই দ্বিমাত্রিক।  
    

৯০ এর দশকের লন্ডনে আবার এটাকে বলা হতো ‘হিরোইন শিক।’ আজকের দিনে আদর্শ শারীরিক গঠন হলো ‘উইজেল বড’, লস অ্যাঞ্জেলিনা জানান, যাকে সারাক্ষণ ঘেরাও করে রাখে নিখুঁত শরীরের জন্য মরিয়া নারীরা। এই নারীরা বেজির মত চিকন হতে চান, যেন কোনো আলোড়ন না তুলে পানির মধ্য দিয়েও তরতর করে চলে যেতে পারেন।  

নারীদের দেহের উপর যে বাড়তি গুরুত্ব চাপানো হয় তা সব নারীই একসময় বুঝে ফেলেন। যেনবা মেয়েরা অসচেতনভাবে একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায় আর তারপর একসময় তাদেরকে গাছগুলো দেখানো হয়। তারপর তারা ভাবতে পারে গাছগুলো ওখানে এলো কী করে, কতদিন ধরে ওগুলো বড় হচ্ছে আর তাদের শিকড় ঠিক কত গভীর পর্যন্ত যায়। কিন্তু গাছগুলোর ব্যাপারে তাদের করার তেমন কিছুই নেই এবং দুনিয়াটা অন্য কোনোভাবে কল্পনা করাও প্রায় অসম্ভব। আর যদিও একটা গপ্পো প্রচলিত আছে যে চালাক ও উচ্চাশাসম্পন্ন নারীরা, যারা শ্রমবাজারে নিজেদের মেধা ও শিক্ষার মাধ্যমে অবদান রাখতে পারেন তাদের নিজেদের শরীরের ব্যাপারে অত সচেতন হওয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রমাণাদি ঘেটে দেখলে বোঝা যায় এমনটা বিশ্বাস করার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। কেননা শরীরের ওজন তাদের আয় ও বেতনের উপরও প্রভাব ফেলে। দরিদ্র দেশগুলোতে, যেখানে গরীবদের চাইতে ধনীরাই ওজনে একটু ভারি, সেখানে এই সম্পর্কটা একটু অন্যরকমের। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি ও সাউথ করিয়ার মত ধনী এশিয়ান দেশগুলায় ধনীরা গরীবদের চেয়ে চিকন হয়। সাধারণত ওজনের বেশিরভাগ পরিমাপক, যেমন দেহের ভরের সূচক, অতিরিক্ত স্থূলতার নিয়ামক, অথবা মোট জনসংখ্যায় স্থূলতার হার ইত্যাদির সাথে আয় ও দারিদ্র্যহারের নিচে বাস করার মধ্যে একটা নিম্নমুখী সম্পর্ক থাকে। 

গরীবদের ওজন যে ধনীদের চাইতে বেশি হয় তার ব্যাখ্যা আগেও দেয়া হয়েছে এইভাবে যে উন্নত বিশ্বে স্থূলতা আদতে দারিদ্র্যের পরিচায়ক। দরিদ্র লোকেরা প্রায়সময়ই সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য কিনে খেতে পারে না। তারা ফাস্ট ফুড অথবা প্রসেসড খাবার বেছে নেয় কারণ হয়তো বাসায় তারা খাবার রান্না করার সময় পায় না অথবা ব্যায়াম করার মতও পর্যাপ্ত সময় তাদের জোটে না, কেননা কম-বেতনের চাকরিগুলোতে সাধারণত অনেক লম্বা শিফট ধরে কাজ করতে হয় এবং ‘ল্যাপটপ শ্রেণীর’ লোকেদের চাকরিগুলোর তুলনায় সেগুলো অনেক কম ফ্লেক্সিবল। আবার যেহেতু বেশিরভাগ সময় শিক্ষার স্বল্পতার কারণেই মানুষ অল্প বেতনের চাকরি করতে বাধ্য হয়, ফলে ধরে নেয়া যায় এই শিক্ষার অভাবের কারণেই তারা অনেকসময় জানেই না কীভাবে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা যায়। 

এতসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সমস্যা হলো উন্নত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার আয় ও ওজনের এই দ্বিমুখী সম্পর্কের প্রায় পুরোটাই সচল রেখেছে নারীরা। আমেরিকা ও ইতালিতে আয় ও স্থূলতার সম্পর্কের ঢাল পুরুষদের ক্ষেত্রে সমতল ও নারীদের জন্য নিম্নমুখী। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ঢাল পুরুষদের ক্ষেত্রে ও ঊর্ধ্বমুখী কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা এতটাই নিম্নমুখী যে দুইয়ে প্রায় কাটাকাটি হয়ে যায়। ফ্রান্সে আবার ঢালটা পুরুষদের জন্যও খানিকটা নিম্নমুখী, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি। এরকমটা প্রায় সকল ধনী দেশেই দেখা যায় এবং ওজন কিংবা স্থূলতা মাপার যেকোনো পরিমাপকের ক্ষেত্রেই তা বহাল থাকে। 

ডাচেসের বিধান 

অন্যভাবে বললে, ধনী নারীরা গরিব নারীদের চাইতে অনেক চিকন কিন্তু বড়লোক পুরুষেরা আর গরিব পুরুষেরা প্রায় সমান মোটা। ওয়ালিস সিম্পসন, যাকে বিয়ে করার কারণে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডকে সিংহাসন ছাড়তে হয়, তিনি নাকি বলেছিলেন একজন নারী ‘যতই চিকন বা ধনী হোক না কেন তা পর্যাপ্ত নয়।’ এখন তিনি নিজে হয় দুটোই ছিলেন না হয় কোনোটাই না। যারা মনে করে স্থূলতার প্রধান কারণ দারিদ্র্য অথবা অনেক টাকা-পয়সা থাকলেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা যায় তারা এখানে একটু খটকায় পড়বেন। কেননা তাহলে ব্যাখ্যা করতে হবে এই সমীকরণ কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই কেন কার্যকর। হয়তো উভয় লিঙ্গের জন্যই এই সমীকরণের ফলাফল একই হওয়ার কথা, কিন্তু তাদের পেশার কারণেই তারতম্য দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই বেশির ভাগ কম-বেতনের ও কায়িক পরিশ্রমের চাকরিগুলোতে নিয়োজিত, যেমন নির্মাণকাজ (যদিও হাসপাতালের নার্সরাও প্রায় রাজমিস্ত্রীদের সমান হাঁটাচলা করেন ও দাঁড়িয়ে থাকেন, ও তাদের অধিকাংশই নারী।) অনেক সময় অভিনেত্রীদেরকে সিনেমার কাজ পাওয়ার জন্য এমনিতেই পাতলা শরীর ধরে রাখতে হয়।  

কিন্তু তবুও এত বিশাল ফারাক ব্যাখ্যা করার জন্য এটাও পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে মোট জনসংখ্যার কেবল ৩.৫% লোক প্রচণ্ড মাত্রার কায়িক শ্রমে নিয়োজিত (এবং সেসব পেশার অনেকগুলোতেই নারীরা বহুলাংশে রয়েছেন, যেমন নাচ কিংবা ব্যায়ামের প্রশিক্ষক।) কেবল ০.১% মানুষ অভিনয়ের মত পেশার সাথে যুক্ত। আয় ও ওজনের দ্বিমুখী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে একটি লৈঙ্গিক ফারাক রয়েছে, এবং তা নারী ও পুরুষের মধ্যকার অন্যান্য পার্থক্য দিয়ে ব্যাখ্যাও করা যাচ্ছে না, সুতরাং পুরো ব্যাপারটা অন্য এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়: হয়তো চিকন হওয়া নারীদের জন্য ধনী হওয়ার পথ সহজ করে দেয়।  

অসংখ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে যে স্থূল নারীরা তাদের চিকন সহকর্মিনীদের তুলনায় কম বেতন পান। অপরদিকে স্থূলকায় পুরুষ ও ‘স্বাভাবিক’ ওজনের পুরুষদের বেতনের মাত্রার মধ্যে তেমন কোনো তারতম্য নেই। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে: একটা সুইডিশ গবেষণাপত্র অনুযায়ী, দেখা গেছে যে স্থূলকায় পুরুষরাই কম বেতন পায়, নারীরা না। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা ও ডেনমার্কের গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্থূল নারীরাই বেতন কম পায়। একজন নারীকে মোটা হওয়ার বেশ ভালোই মূল্য চোকাতে হয়, এতে তার বেতনের প্রায় ১০% কাটা পড়ে। 

স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যও বেড়েছে  

দেহের মাপের জন্য যাকে কোনোদিন কোনো চাকরি দেয়া হয়নি তার জন্য আয়ের এই ফারাকটা আঁচ করা অনেক কঠিন হবে। কেবল শরীরের গড়ন পাতলা হওয়ার কারণে একজন নারী এত বেশি বেতন পেতে পারেন যে, তার জন্য আরো বেশি পড়াশুনা করার চাইতে ওজন কমানোতে মনোযোগ দেয়াই বেশি লাভজনক হবে। একটা মাস্টার্স ডিগ্রি একজনের বেতনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে ১৮%। একজন নারী কেবল ৬৫ পাউন্ড ওজন কমানোর মাধ্যমে এর ১.৮ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করাতে পারেন। শ্বেতাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি ঘটে—কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা হিসপ্যানিক নারীদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার নজির তুলনামূলক অনেক কম (যদিও এর কারণ হতে পারে যে গবেষণার ক্ষেত্রে সাধারণত বিএমআই মাপা হয়, এবং সে ক্ষেত্রে এইসব নারীদেরকে প্রায়ই ভুলভাবে শ্রেণীকরণ করা হয়।) 

মোটা নারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য মোটেই কমেনি। অর্থনীতিবিদ ডেভিড লেম্পার্ট লিখেছিলেন, ‘স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা আশা করতে পারি তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য কমে আসবে। কেননা আজকের দিনে ওজন বেড়ে যাওয়া বেশ স্বাভাবিক। অথচ বর্তমানে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যও বেড়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এর মাত্রা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তার মতে এর কারণ হলো, ‘পাতলা দেহ বর্তমানে আরো বিরল হয়ে পড়ার কারণে সেটাকেই প্রিমিয়াম মনে করা হয়।’   

এই গবেষণাপত্র যে উপসংহারের দিকে ইঙ্গিত দেয় তাতে ক্রুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। স্থূলকায় নারীদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে গোটা জীবন ধরে চাপিয়ে দেয়া আয়ের বৈষম্য তাদেরকে জেঁকে ধরে। তাদের শুরুর বেতনও হয় অনেক অল্প, এবং গোটা কেরিয়ারে পদোন্নতি পান তারা অনেক কম। তার গবেষণা অনুযায়ী, ‘১৯৮১ সালে এক ২০ বছর বয়সী নারীর তুলনায় ২০০৪ সালে এক ৪৩ বছর বয়সী স্থূলকায় নারী বেতনের ক্ষেত্রে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।’   


তাছাড়া স্থূলকায় কর্মচারীরা যে মালিকদের অধিক খরচার কারণ হয় তার আংশিক প্রতিফলনও এখানে ঘটে। বিশেষ করে আমেরিকায় এমনটা বেশি ঘটে। হেলথ ইন্স্যুরেন্সের খরচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারাই বহন করেন। আর স্থূলকায় মানুষদের পিছনে এ ক্ষেত্রে বেশি খরচ হয়, কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগতে থাকেন।  


তবু, এসবের ভার কেবল নারীদের উপরই কেন চাপিয়ে দেয়া হবে তা অস্পষ্টই থেকে যায়। এবং কানাডা ও ইউরোপ, যেখানে হেলথ-কেয়ারের খরচ সরকার বহন করে, সেখানেও নারীদের ক্ষেত্রে একইরকম আয়গত ঘাটতি লক্ষ করা যায়।   

স্থূলতার কারণে আয়ের বৈষম্য যে বাড়ছে বই কমছে না—তার প্রমাণ পাওয়া যায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ‘অন্তর্গত পক্ষপাত’ পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষার্থীদের এখানে বলা হয় বিভিন্ন মানুষের জাতি, লিঙ্গ, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান কিংবা ওজনের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে ভালো কিংবা খারাপ হিসেবে চিহ্নিত করতে। এবং এ ক্ষেত্রে ফলাফল বেশ ইতিবাচক দিকেই মোড় নিচ্ছে। জাতিগত ও লৈঙ্গিক বৈষম্য গত এক দশকে বেশ কমে এসেছে। সমকামীদের প্রতি বিরূপ মনোভাবও এক তৃতীয়াংশ কমেছে। কিন্তু ওজনের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। শারীরিকভাবে ভারী মানুষের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব আগের চেয়ে বেড়েছে।    

এই প্রেক্ষাপটে নারীরা ওজন কমানোর জন্য এত চাপ ও নিজের ওজন নিয়ে এতটা হীনমন্য কেন বোধ করে তার পিছনের অন্যসব কারণ ও ব্যাখ্যাগুলো বেশ অসম্পূর্ণ মনে হয়। হয়তো নারীরা নিজেদের শরীর নিয়ে এত হীনমন্য  বোধ করে কারণ সারাক্ষণ তারা ম্যাগাজিনের তন্বী মডেলদের দেখে ভাবে সেগুলো একদম এডিটেড না এবং নিজেদের সাথে তুলনা করে। কিংবা হয়তো কোনো ডাক্তার অথবা বাবা-মা ছোটবেলায় তাদের শরীর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছিল। বর্তমান বাজারের এসব চাপের পাশাপাশি: নারীরা হয়তো মনে করে যে ওজন কমাতে না পারলে তাদেরকে তার খেসারত দিতে হবে। আর সেটা সত্য।   

অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়, পড়াশুনায় সময় দেয়া বুদ্ধিমান কাজ কেননা শ্রমবাজারে তার স্পষ্ট লাভ পাওয়া যায়। একইভাবে একজন নারীর জন্য ওজন কমাতে চাওয়াও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কোন খাবার কতটুকু খেতে হবে এই নিয়ে মাথা ঘামানো ও ব্যয়বহুল ব্যায়ামের পিছনে টাকা খরচ করা আসলে এক প্রকার বিনিয়োগ পরবর্তীতে যার রিটার্ন পাওয়া যায়। পুরুষদের জন্য এমনটা হয় না।        

একজন আদর্শ নারীর সেই পরজীবী ধারণা বর্তমান আপাত-বিরূপ আবহের মধ্যেও টিকে আছে
অলংঙ্করণঃ ঈহা

নারীরাও এই ব্যাপারে বেশ সচেতন। এক প্রজন্ম আগেও এ ব্যাপারটাকে তারা তেমন আমলে নিত না। ‘চাকরির পরে—কিংবা এর মধ্যেই সবচেয়ে মৌলিক যে বিষয়টা সামলাতে হবে তা হলো নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে ও কেমন বোধ হচ্ছে। একজন নারী যে সবকিছু পেতে চায়, সে মোটা হয়ে থাকতে চাইবে তা ভাবাই যায় না’,  নিজের বই হ্যাভিং ইট অল-এ লিখেছিলেন ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে কসমোপলিটান ম্যাগাজিনের সম্পাদক হেলেন গার্লি-ব্রাউন। এই বইতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন কীভাবে দিনে ৮০০ ক্যালোরির খাবার খেয়ে টিকে থাকতে হবে, এবং  নারীদেরকে উপদেশ দিয়েছেন প্রতিদিন নিজেদের ওজন মেপে দেখতে ও মেনে নিতে যে ‘ডায়েট করা একদম জাহান্নাম, এবং এই নিয়ে এত মন খারাপ করার কিছু নেই!’   

আজ থেকে চার দশক আগে এরকম মনোভাব বেশ গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয় না। বদলেছে শুধু বয়ানটা, যা এখন সকল প্রকার শারীরিক গঠনের প্রতি সহিষ্ণু হয়েছে এবং ডায়েট করাকে নাকচ করেছে। সাউথ-বীচ ডায়েট কিংবা অ্যাটকিন্স খাদ্য বাতিলকরণের বদলে এখন বলা হয় গ্লুটেন-মুক্ত, ভিগান, লো-শুগার—সুস্বাস্থ্যের ছদ্মবেশে এখন এসবের প্রচারণা চালানো হয়। মানুষ বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে সোল সাইকেল ক্লাসে যায় ফিট থাকার জন্য, ক্যালোরি বার্ন করার জন্য না। জিয়া টলেন্টিনো তার ট্রিক মিরর বইয়ে লিখেছেন,  ‘এখনকার চকচকে ম্যাগাজিনগুলোও আগের মত আর  নারীর আদর্শ কোনো রূপের প্রচারণা চালায় না…কিন্তু একজন আদর্শ নারীর সেই পরজীবী ধারণা বর্তমান আপাত-বিরূপ আবহের মধ্যেও টিকে আছে।’ নারীবাদ ‘আদর্শ নারীর ধারণার দুঃশাসনকে নির্মূল করার পরিবর্তে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে।’ 


পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ধারণাটা ভ্রান্ত

ওজন বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়, ফলে অনেকেই বলে থাকেন যে নারীর উপর ওজন কমানোর যে চাপ দেয়া হয় তা তেমন খারাপ কিছু না। কিন্তু এই যুক্তির ভিত্তি বেশ নড়বড়ে।
প্রথমত, মানুষের ওজন সবসময় তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। 

দ্বিতীয়ত, লজ্জা একটা কার্যকর হাতিয়ার। বেশিরভাগ মানুষের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একটু কম খেলে ও বেশি নড়াচড়া করলেই ওজন কমে যায়, ফলে এমনটা মনে করা স্বাভাবিক যে ওজন ও স্থূলতা সহজেই পরিবর্তনীয়। মনে হতে পারে চিকন মানুষেরা কষ্ট করে এই শারীরিক গঠন অর্জন করেছে ও মোটা ব্যক্তিরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনটা হলে নারীরা চাইলেই এই ওজন-বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পারেন, সমাজ তাদের কাছে যেরকম শারীরিক গড়ন আশা করে সেটা মেনে নিলেই হয়।   

কিন্তু পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের এই ধারণাটাই ভুল। অনেকেরই অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট সেবন শুরু করার পরে ওজন বাড়তে শুরু করে; পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম জাতীয় সমস্যার কারণে নারীরা আরো বেশি মাত্রায় এসবের সম্মুখীন হন। গে বলেছিলেন যে যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরবর্তীতে তার ওজন বেড়ে যায়। এছাড়াও প্রশ্ন জাগে ১৯৮০ সালের পর মানুষের খাদ্যাভ্যাস এভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল কেন? কেননা ১৯৮০ সাল থেকেই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে স্থূলতার হার অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়তে শুরু করে। বিজ্ঞানীরাও এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারছেন না (কেউ কেউ প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে আঙুল তোলেন) কিন্তু তারা একমত যে নিজের ইচ্ছামত ওজন কমিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব—এবং এমনটা করতে পারাদের সংখ্যা খুবই কম। সে তুলনায় এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি যারা সারাজীবন ওজন কমানোর চেষ্টা করে যায়, তারপর ব্যর্থ হয়ে নিজেদেরকে দোষারোপ করতে থাকে।     

হয়তো চক্ষুলজ্জা কারো কারো জন্য কাজে দেয়। মিসেস গুইলিয়ানোর জন্য দিয়েছিল। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো বাবার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে এড়িয়ে যাওয়ার বদলে তিনি ওজন কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, কিছুক্ষণ তিনি চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, ‘কিন্তু, অবশ্যই, বাবা তো ঠিকই বলেছিলেন।’  


মূল্যটা ভীষণ চড়া 

ওজন বেড়ে যাওয়ার যে কলঙ্ক, লজ্জা বা ভয় মেয়েদের মধ্যে কাজ করে, তার বদলে মেয়েদেরকে যে খেসারত দিতে হয় সেটার কথাও ভাবুন। নারী হিসেবে এ দুনিয়ায় চলাফেরা করলে নারীদেরকে কী পরিমাণ সময় নিজেদের খাবারের হিসাব রাখায়, ডায়েটের বই পড়ায়, ব্যায়ামের ক্লাস করায় ব্যয় করে তা নজর এড়ানো প্রায় অসম্ভব। জীবনে যারা কখনো জুস ক্লেঞ্জ কিংবা বাধাকপির স্যুপের ডায়েট করেছেন তারা জানেন যে ওজন কমানোর এই প্রচেষ্টার কারণে মেয়েরা নিজেদের পছন্দের অন্য অনেক কাজই আর করতে পারে না, যেমন পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া কিংবা নিজেদের পছন্দের খাবার খাওয়া।   

কিছু জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ছয় বছর বয়সী মেয়েরাও নিজেদের উপর চিকন শরীর ধরে রাখার চাপ অনুভব করে থাকে। আর বয়ঃসন্ধিকাল পার করার সময় তারা ‘আচানক সৌন্দর্যের এক অবাস্তব প্রত্যাশার চাপে নাজেহাল হয়ে পড়ে, এবং ভাইরাসের মত তাদের মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য কিংবা বুলিমিয়ার মত রোগ ছড়াতে থাকে,’  লিখেছেন মিসেস টোলেন্টিনো। আর সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো এখান থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। বেশিরভাগ নারীই এসবের সাথে মানিয়ে নেন। কেউ কেউ মেনে নেন না। আর অনেকে স্রেফ ব্যর্থ হন। কিন্তু যে পথটাই তারা বেছে নিক না কেন, তার মূল্যটা ভীষণ চড়া।  

[লেখাটি দি একোনমিস্ট পত্রিকায় ২০ ডিসেম্বর ২০২২ এর ক্রিসমাস স্পেশাল সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিলো: দ্য ওয়েইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। ]      

থেকে আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

আমাদের একে অপরকে কী দেয়ার আছে?

ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জনাথন ট্রট বলেন তার এই ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, ‘আমার কোন ধারণা নেই। কখনো কি দুটি সুপার ওভার হয়েছে? আমি এটাই বলার চেষ্টা করেছি। এটা একদমই নতুন ব্যাপার। নিয়মগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করছি, জানছি।’

সিমু নাসের

সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক

'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা। ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী।

ইউরোপে আসা হাজার হাজার শরণার্থী প্রত্যেকদিন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন—দেয়াল, বেড়া বা কাঁটাতারের মতন দৃশ্যমান বাধাই কেবল নয়, বরং তার চেয়েও সুগভীর এক প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। এই প্রতিরোধের উৎস পুরো ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদ এবং অভিবাসী-আতঙ্ক।  

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা, যেমন—ইস্তাম্বুল, প্যারিস ও অন্যান্য স্থানে ইসলামিক স্টেটের হামলা, আর সেইসাথে ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে জার্মানির কোলনে নারীদের উপর গণ-আক্রমণ—এই অপরায়নের ভিত্তিকে জোরদার করে অপরের প্রতি এই অযৌক্তিক ভীতিকে বাড়িয়ে তুলেছে। এরপর আবার আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের আগমন নিয়ে বিতর্ক, যে বিতর্কের ফলশ্রুতিতে দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাতে জাতীয়তাবাদী মনোভাবও ফুটে উঠেছে।   

বর্তমানে, জার্মানি এবং অন্যান্য দেশে অভিবাসীদের জন্য দ্বার বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু যাদের আশ্রয়ের প্রয়োজন, তাদের জন্য এই প্রতিরোধের ফলাফল কি? এই প্রতিরোধ কি আদৌ ন্যায্য? নিজেদেরকে নীতিবান দাবী করতে চাইলে এই দুঃখী ও বঞ্চিত মানুষদের জন্য কি আমাদের আরোও বেশি কিছু করা উচিত? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর লেভিনাসের মতন সরাসরি খুব কম দার্শনিকই দিতে পেরেছেন।   

১৯০৬ সালে লিথুনিয়ার কাউনাসে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লেভিনাস। ১৯২৩ সালে তিনি ফ্রান্সে যান এবং ১৯২০-এর দশকের শেষের দিকে এডমন্ড হুসার্ল এবং মার্টিন হাইডেগারের অধীনে জার্মানিতে দর্শন অধ্যয়ন করেন। ১৯৩০-এর দশকে ফ্রান্সে হুসার্ল ও হাইডেগারের লেখা অনুবাদ করে নিজেকে ফেনোমেনোলজির প্রথম সমর্থকদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন লেভিনাস। তবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, সত্তার অর্থ অনুসন্ধানের মত দুর্বোধ্য বিষয়ের প্রতি ফেনোমেনোলজির উৎসাহ নিয়ে তার বোঝাপড়া পরিবর্তিত হয় এবং এ বিষয়ে তার আগ্রহ স্তিমিত হয়। লেভিনাসকে ১৯৩৯ সালে ফরাসি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়েছিল। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা তাকে বন্দী করে। অফিসার হওয়ার সুবাদে তাকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে না পাঠানো হলেও, তার পরিবারের সকল সদস্যকে ইহুদি ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে নাৎসিরা হত্যা করেছিল। যুদ্ধের পর, লেভিনাস সবসময়ই মানুষের মধ্যে নৈতিক সম্পর্কের, অর্থাৎ অন্যদের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা পুরণের জন্য কাজ করার ক্ষমতার, সুনির্দিষ্ট উৎস বর্ণনা করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

লেভিনাসের আদারওয়াইজ দ্যান বিইং-এর এপিগ্রাফে লেখা আছে: ‘জাতীয় সমাজতন্ত্রীদের (নাৎসি বাহিনী) হাতে খুন হওয়া ষাট লক্ষের মধ্যে যারা সবচেয়ে আপন ছিলেন, এবং আরো কোটি কোটি মানুষ—সব ধর্মের, সব জাতির—যারা সেই একই ঘৃণার শিকার হয়েছেন, একই ইহুদি-বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন—তাদের সবার স্মরণে’। বইটি অপরায়নের  এসেন্স সম্পর্কে  গভীর মননশীলতার ফলাফল।  

একইসাথে বইটা সবিস্তারে এমন স্বতঃস্ফূর্ত আতিথেয়তার কথা বলে, যা আমাদের মনুষ্যত্বকে ধারণ করে। এছাড়া, লেভিনাসের অন্যান্য রচনাও আমাদেরকে জাতীয়তাবাদের প্রকৃতি ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আর তাদেরকে সাধ্যমত সাহায্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। 

জাতীয়তাবাদ হলো চিহ্নিতকরণ ও পার্থক্যকরণের ফল, যা নিজেদের এবং অন্যদের মধ্যে দেখা সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থেকে উদ্ভূত হয়। একজন আমেরিকান হিসেবে আপনি অন্যান্য অনেক আমেরিকানদের মতন একটা শৈশবই পেয়েছেন। আপনার ছোটবেলাটা সে হিসেবে বেশিরভাগ ব্রিটিশ বা ইতালীয়দের থেকে আলাদা।  ফলে, আমেরিকানদের সাথে আপনার যে মিলগুলো আপনি পান, সেগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে, এবং সেই বৈশিষ্টগুলোর সাথে অন্যান্য দেশের মানুষের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য খুঁজে বের করার মাধ্যমেই অনেকাংশে আপনি আপনার নিজের পরিচয় গঠন করেন। কিন্তু, ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে, পরিচয় গঠনের এরূপ প্রক্রিয়া চরম পর্যায়ে গেলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। 

যে বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্যের ভিত্তিতে আমরা ‘একই’ এবং ‘অপর’-কে চিহ্নিত করি, তার মধ্যেই লেভিনাস জাতীয়তাবাদের উৎস খুঁজে পান। আর এই চিহ্নিতকরন ও পার্থক্যকরণ যদিও আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় গঠনে সহায়তা করে, এই প্রক্রিয়াটা ভয়ংকর বৈরিতায়ও রূপ নিতে পারে। এ বিপদ ঘটে তখন, যখন, যেই বৈশিষ্টগুলোর মিল বা অমিলের ভিত্তিতে আমরা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করি, সেই বৈশিষ্টগুলোকে আমরা সর্বজনীন পরম সত্য হিসেবে ধারণা করি। এ ক্ষেত্রে সর্বজনীন পরম সত্য বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই অবস্থাটাকে যখন একটি গোষ্ঠীর কিছু সদস্যের একটি বৈশিষ্ট্যকে সেই গোষ্ঠীর সকলের সর্বকালীন বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনটা হয় যখন কিছু প্রচলিত ধারণা যেমন ‘আমেরিকানরা ফুর্তিবাজ’, ‘ব্রিটিশরা গম্ভীর’ এবং ‘ইতালীয়রা আবেগপ্রবণ’ একজন আমেরিকান, ব্রিটিশ বা ইতালীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে অসঙ্গতভাবে প্রয়োগ করা হয়।  ইতিহাস আমাদেরকে দেখায় যে, এই প্রচলিত ধারণাগুলো যখন নেতিবাচক হয়, যেমন, ‘ইহুদিরা লোভী’, ‘কৃষ্ণাঙ্গরা বিপজ্জনক’, বা ‘মুসলিমরা সন্ত্রাসী’, তখন এগুলো এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায্য আক্রমণ ও বৈরিতার পেছনে সহায়ক হয়ে ওঠে। এখানে দেয়া প্রতিটি উদাহারণেই, যারা ‘অন্য’ বা ‘আলাদা’, তারা একটা বৈশিষ্ট্যের বাক্সে বন্দী হচ্ছে যা ‘তাদেরকে’ ‘আমাদের’ থেকে একেবারে ভিন্ন করে তুলছে। মানুষকে কিছু প্রচলিত ধারণার বাক্সে বন্দী করার এই অভ্যাস বেশিরভাগ সময়ই ‘অন্য’দের প্রতি এক অসহনীয়তার জন্ম দেয় যার উদাহারণস্বরূপ আমরা দেখতে পাই ইউরোপের চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করার এক প্রবণতা, যা আফগান, ইরাকি এবং সিরিয়ান শরণার্থীদের ইউরোপে ঢুকতে দেবে না।    

আমাদের এই অসহনীয়তার দাওয়াই হিসেবে লেভিনাস তিনটা বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন:
১. মানুষের মধ্যকার অসীমতার প্রতি আবেদন,
২. মানুষের সাথে মানুষের মুখোমুখি সাক্ষাত এবং
৩.সেই স্বতঃস্ফূর্ত আতিথেয়তা যা মানবতাকে ধারণ করে।   

অসীমতা বলতে লেভিনাস বোঝাতে চেয়েছেন যে মানুষ সবসময়ই যেকোন শ্রেণীভিত্তিক বাক্সের চাইতে অনেক বেশি কিছু। আপনি মিডল্যান্ড থেকে আসা একজন ব্রিটিশ অ্যাংলিকান হতে পারেন, কিন্তু আপনি কেবল তা-ই নন। আপনি কারোর বাবা, কারোর ছেলে, কারোর স্বামী। আপনার চুলের রঙ কালো, চোখের রঙ বাদামী আর আপনার দাড়ি হাল্কা পেকে যাচ্ছে। আপনার রাজনৈতিক মতামত আছে, বিশ্বের শুরু কিভাবে হলো তা নিয়ে বিতর্কিত বিশ্বাস আছে ইত্যাদি। একইভাবে, একজন সিরিয়ান অভিবাসী হয়তো মুসলিম, কিন্তু তিনি কেবল তা-ই নন। তিনি আরো অনেক কিছু! তিনি কারোর মা, কারোর মেয়ে, কারোর স্ত্রী। তার চুলের রঙ কালো, চোখের রঙ বাদামি—তার চোয়াল ধারালো! তার নিজস্ব কিছু রাজনৈতিক মতামত আছে এবং মহাবিশ্বের শুরু কিভাবে হলো তা নিয়ে আছে বিতর্কিত বিশ্বাস ইত্যাদি। 

মানব সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের পূর্বশর্তই হলো অন্যদেরকে স্বাগতম জানানো
প্রতীকী ছবি

মানুষের মধ্যের এই অসীমতার দিকে নজর এনে লেভিনাস আমাদেরকে দেখাতে চাচ্ছিলেন যে আমরা চিহ্নিতকরণ এবং পার্থক্যকরণের মাধ্যমে কখনোই অন্যদের পরিপূর্ণ কোন পরিচয় গঠন করতে পারিনা। মানুষের মনুষ্যত্বের অসীমতার দিকে আলোকপাত করার মাধ্যমে আমাদের অভিবাসী-আতংকের প্রবৃত্তি এবং মানুষকে বাক্সে আটকে রাখার প্রবণতাকে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও থামিয়ে দিতে চান লেভিনাস। 

অন্য মানুষের মনুষ্যত্বের অসীমতা খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তাদের চেহারায়। মানুষের মুখ তাদেরকে বাক্সে বন্দি হতে দিতে নারাজ। লেভিনাস মানুষের অসীমতার কথা বলতে গিয়ে মানুষের চেহারায় ঈশ্বরের উপস্থিতির কথা বলেন। এর পাশাপাশি তিনি আরো বলেন যে মানুষের মুখ মানুষের আরেকটি দিকও প্রকাশ করে- নাজুকতা। মুখের কোন রাখঢাক নেই, মুখ উন্মুক্ত—আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে যেকোন সময়। মুখ সুরক্ষা খোঁজে, খোঁজে যত্ন। লেভিনাস অপরিচিত, বিধবা এবং এতিমকে বঞ্চিতদের উদাহারণ হিসেবে বিবেচনা করেন। আমরা এর সাথে সাথে আশ্রয়প্রার্থী এবং সংকটাপন্ন নির্বাসিতদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারি চূড়ান্ত বঞ্চিতদের তালিকায়। তবে, নাজুকতা সম্পর্কে লেভিনাসের বিশ্লেষণ আমাদেরকে দেখায় যে তার মতে, অন্যের প্রয়োজনের সময় আতিথেয়তা প্রদান করা কেবল ব্যক্তিত্ব বিকাশেই সহায়তা করে না, বরং মানবতার এমন এক রূপ প্রকাশ করে যা সকল জাতি, ধর্ম, দেশের সীমানার উর্ধ্বে। 

লেভিনাসের মতে, আতিথেয়তা অর্থ অন্যের চাহিদার মুখে নিজের ভোগ কমিয়ে আনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কাউকে আমাদের বাসায় স্বাগত জানিয়ে তার সাথে আমাদের যা আছে তা ভাগাভাগি করে নেয়া। অন্যদেরকে স্বাগত জানানো, তাদের প্রয়োজন ও আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের সাথে আমাদের যা আছে তা ভাগাভাগি করে নেয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় আমরা মানুষ হিসেবে কেমন। একটা ব্যক্তিনিষ্ঠতার আলোচনায় লেভিনাস এই ধারণাটা প্রকাশ করেন, যে আলোচনায় নিজ সত্তাকে বর্ণনা করা হয় একইসাথে হোস্ট এবং জিম্মি হিসেবে। আমরা অন্যদের জন্য হোস্ট, কারণ অন্যদেরকে আমাদের জগতে স্বাগত জানানো তাদের সাপেক্ষে আমাদের নিজেদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের সাথে আমাদের পার্থক্যকরণের পূর্বশর্ত। এবং আমরা জিম্মি, কারণ অন্যরা আমাদের কাছে যে দাবি করে, সে দাবির প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয় নির্ধারিত হয়।  

যেমন, আপনার পরিচয় হলো আপনি একজন ইতালীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আপনার এই পরিচয় গঠিত হয়েছে অন্যদের শিক্ষার চাহিদাকে স্বীকার করে, সেই চাহিদার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়ার ফলে। একইভাবে, ধরে নেই একজন সিরিয়ান লোকের কথা যে শরণার্থী পাচারকারী হিসেবে পরিচিত। তার এই পরিচিতি হয়তো একজন নির্বাসিত ব্যক্তির নিরাপদে সমুদ্র পারাপারের চাহিদাকে স্বীকার করে সেই চাহিদার প্রতি তার প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।  উদাহারনগুলো আমাদেরকে দেখায় যে মানবসমাজের যেকোন জায়গায় আমাদের স্থানের ভিত্তিই হলো অন্যদের প্রয়োজন মেটানোর এবং চাহিদার পূরণ করার সক্ষমতা। লেভিনাস আমাদেরকে আরো দেখান যে আতিথেয়তা কেবল নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদের পরিচয় নির্ধারণেই ভূমিকা রাখেনা, বরং এটা মানবতার প্রতীকও।  এ হিসেবে, আতিথেয়তা মানব সম্প্রদায়ের ভিত্তি।   

বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের পূর্বশর্তই হলো অন্যদেরকে স্বাগতম জানানো।  তাদের সাথে আমাদের সম্পদ ভাগাভাগি করে নেয়ার সক্ষমতা। টোটালিটি অ্যান্ড ইনফিনিটি-তে লেভিনাস লিখেছিলেন, ‘অপরের সত্তাকে স্বীকার করার অর্থ হলো হলো ব্যক্তিমালিকানার এই দুনিয়ায় অন্যের দিকে এগিয়ে আসা এবং  উপহার প্রদানের মাধ্যমে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।’  

অন্যের চাহিদা যখন আমাদের পার্থিব আমোদ-প্রমোদে বাধ সাধে, তখন আতিথেয়তা আমাদেরকে দিতে শেখায়, ভাগাভাগি করে নিতে শেখায়। এছাড়া আতিথেয়তার মাধ্যমে তৈরি হয় এক নতুন ভাষা, যা আতিথেয়তা প্রদানকারী এবং গ্রহণকারী দুইজনেরই ভাষা। এভাবে আতিথেয়তা বন্ধুত্বপূর্ণ মানবসমাজ সৃষ্টি করে। লেভিনাস লিখেছেন যে, ভাষা সর্বজনীন কারন ভাষা একক ব্যক্তি থেকে সর্বসাধারণের কাছে যাওয়ার মাধ্যম—অর্থাৎ, যা আমার, তা অন্যকে দেয়ার মাধ্যম হলো ভাষা। আমরা যখন কথা বলি, আমরা পৃথিবীকে জনসাধারণের করে তুলি। ভাষা কেবল কিছু বিমূর্ত ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করেনা, বরং ভাষা এ সকল ধারণাকে জনসাধারণের মধ্যে ছেড়ে দেয়—জনসাধারণের বোঝাপড়ার একটি ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করে। এটা উপভোগের অবিচ্ছেদ্য এক বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করে।   

আলোচনার জগত আর একজনের মধ্যে আটকে থাকে না—কেবল আমি আর আমার সংস্পর্শে আসা সব চিন্তা-ভাবনা, ধারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনা এই জগত; বরং এতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে আমার অবদানটুকুও—এ জগত হয়ে ওঠে যোগাযোগের জগত, চিন্তাভাবনার জগত, সর্বজনীন জগত।  

সবার ব্যবহার্য একটি ভাষা তৈরি করা অবশ্যই মানব সম্প্রদায়ের ভিত্তি। কিন্তু এর পাশাপাশি, ভাষা আমাদেরকে অন্যদের চিহ্নিত করার এবং একইসাথে নিজেদেরকে তাদের থেকে আলাদা করার সুযোগও দেয়। এর ফল হিসেবেই দেখা যায় যে কেবল একটা অভাবগ্রস্ত মুখ না দেখে আমরা দেখি একটা ‘সিরিয়ান’ মুখ বা ‘মুসলিম’ মুখ। একটা মানব সম্প্রদায়ের ভিত্তি এই ‘অন্য’দের প্রশ্নও জিজ্ঞেস করে—যেখানে যেকোন মুখোমুখি সাক্ষাৎ অন্য কারোর মুখ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।  অর্থাৎ, আমাদেরকে বলা হয় অন্য সকল মানুষের সাথে আমাদের সম্পদ ভাগ করে নিতে। লেভিনাস এই অনুরোধকে একইসাথে খুব জরুরি কিন্তু অসম্ভব একটি দায়িত্ব হিসেবে দেখেন, কারণ আমাদের যা আছে তা আমরা যে কাউকে দিতে পারলেও সবাইকে দেয়ার মতন পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ আমাদের নেই। আমরা এই অসম্ভব দায়িত্বের মুখোমুখি হলে,  তখন আমাদের ন্যায়বিচার প্রয়োজন হয়: সকল মানুষের মধ্যে সুশৃঙ্খল সংগঠন এবং সম্পদের বণ্টন। আবার এই পর্যায়ে আমরা সেই অপরিবর্তনশীল পরিচয় আর দৃশ্যমান সীমারেখা নিয়ে জাতিরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার কাছেই চলে আসি—যেখান থেকেই আলাপের শুরু হয়েছিল।     

যদিও মনে হচ্ছে যে আমরা ঘুরেফিরে সেই একই আলাপে এসে পৌঁছেছি, লেভিনাস আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে অন্যদের প্রতি আমাদের দায়িত্বই মানব সম্প্রদায়ের ভিত্তি, আর একটা অর্থবহ পৃথিবীতে বসবাস করা কেবলমাত্র অন্যদের জন্য নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমেই সম্ভব। যেহেতু আমাদের ঘরে অন্যদের স্বাগত জানানো এবং তাদের সাথে আমাদের সম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়াই  সেই ভিত্তিপ্রস্তর যার উপর সব সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে, নিপীড়িত বা বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্টের সামনে কোনভাবেই কোন আতিথেয়তাহীন জাতীয়তাবাদকে নিরন্তর সমর্থন করা যাবেনা। ‘একই’ এবং ‘অন্য’-এর সম্পর্কের মধ্যে আমার ‘অন্য’কে স্বাগত জানানোটাই’, লেভিনাস বলেন, ‘চূড়ান্ত সত্য’। এটাই মানবতার আতিথেয়তা—বা, সব শত্রুতার আগে বিদ্যমান এক শান্তি। আর এই আদি শান্তিতে, শরণার্থীদের প্রতি খুব স্বতঃস্ফূর্ত এই আতিথেয়তার মাঝে, যেমনটা লেভিনাস মনে করিয়ে দেন, ‘কোনকিছুই কোনো একজনের দ্বারা নির্মিত হয়না, বরং, সবকিছুই মানুষের সামষ্টিক অবদানের প্রতিফলন।’   

ওয়েবসাইট এক্সেস করতে প্রবেশ অথবা রেজিস্টার বাটন এ ক্লিক দিন